হুমায়ুন সম্রাট : গত ৯জুন ২০১৬ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন ১৯৭৪ (হালনাগাদ সংশোধিত)-এর ২০এ(বি) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ভারোত্তোলন ফেডারেশনের নির্বাচিত কমিটি বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন না দিয়ে বিতর্কিত ২৪ সদস্যের অ্যাডহক কমিটি গঠন করে।
গত ৯জুন থেকে ছয়মাস মেয়াদ চললেও এখন পর্যন্ত এনএসসির তৈরী অ্যাডহক কমিটি তেমন কিছুই করতে পারেনি। এই ছয় মাসে একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিয়োগিতায়ও ঠিকমত দল পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছে। বাইরে দল পাঠানো তো দুরের কথা অ্যাডহক কমিটির কর্তারা একের পর এক জন্ম দিয়েছেন নানা বিতর্কের।
পারেননি সময়মত নির্বাচন আয়োজন করতে। যার ফলে এশিয়ান ওয়েটলিফটিং ফেডারেশন তাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বাংলাদেশ ভারোত্তোলন ফেডারেশনকে তাদের আয়োজিত সকল আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
এমন পরিস্থিতে এরই মধ্যে বির্তকিত এ কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন গুরুত্বপূর্ণ তিন সদস্য। এবার অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে অ্যাডহক কমিটি থেকে পদত্যাগ করলেন সাধারণ সম্পাদক কর্নেল শহিদুল ইসলাম।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফেডারেশনের একাধিক খেলোয়াড় ও কয়েকজন কর্মকর্তা।
গত বৃহস্পতিবার (১৯নভেম্বর) সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সচিব বরাবর পদত্যাগের চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, “আমি নিন্ম স্বাক্ষরকারী বর্তমান বাংলাদেশ ভারোত্তোলন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। উল্লেখ্য যে, শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ থাকার কারণে আমি আমার পদ থেকে সেচ্ছায় পদত্যাগ করছি”।
চিঠিটা তিনি ফেডারেশনের সভাপতিকেও দেন। কিন্তু সভাপতি মঞ্জুর কাদের কোরাইশী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজল দত্ত বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগের বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন খেলোয়াড় বলেন, মুলত কাজল দত্ত সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে ফেডারেশনে থাকার জন্য এ চিঠির ব্যাপারটা গোপন রাখার চেষ্টা করেন। কারণ তারমত অযোগ্য লোকের পক্ষে তো আর নির্বাচনের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক হওয়া সম্ভব নয়। তাই লুকোচুরি করে যতদিন সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা যায় সে কারণেই তিনি ও সভাপতি এই চিঠি গোপন করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য কর্নেল শহিদুল ইসলামকে কয়েকবার ফোন দিলে (০১৭১৩০৬০৬২৪) তিনি কল রিসিভ করেননি।
এদিকে, বর্তমান কমিটির এক সদস্য জানান, সাধারণ সম্পাদকের সেচ্ছায় পদত্যাগের নেপথ্য কাহিনী।
১. জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অর্থায়নে তৃণমুল পর্যায়ে চলমান প্রতিভা অন্বেষণ কার্যক্রমের ব্যয়ের হিসেব মিলাতে না পারা।
২. এশিয়ান ওয়েটলিফটিং ফেডারেশন থেকে বাংলাদেশ ভারোত্তোলন ফেডারেশনকে তাদের আয়োজিত সকল আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করা।
৩. ৬মাস মেয়াদ চললেও নির্বাচন আয়োজনে ব্যর্থ হওয়া।
৪. মাবিয়া আক্তার সিমান্তর সাথে সভাপতির অশোভন আচরনের ফলে নানা দিক থেকে সমালোচনার মুখে পড়া।
৫. কোন প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে না পারা। সবমিলে তিনি বুঝতে পেরেছেন তাকে দিয়ে ফেডারেশন চালানো সম্ভব নয়। তাই তিনি অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সেচ্ছায় পদত্যাগের নাটক করে সরে পরেছেন।
তবে বর্তমান অ্যাডহক কমিটির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও খেলোয়াড়রা চেয়ে আছেন এনএসসির দিকে। তারা বলেন এখন ভারোত্তোলন ফেডারেশনে যে পরিস্থিতি চলছে তা থেকে এ ফেডারেশনকে বাঁচাতে এখন শুধুমাত্র জাতীয় ক্রীড়া পরিষদই পারে। এনএসসি বিষয়টি দূত সমাধানের ব্যবস্থা না করলে আমরা খেলোয়াড়রা আরো ক্ষতিগ্রস্থ হবো।
উল্লেখ ২অক্টোবর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর পদত্যাগ পত্র জমা দেন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রাপ্ত (ভারোত্তোলন) খেলোয়াড় ও খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ ও সেনাবাহিনীর সাবেক লিফটার ও কুষ্টিয়া অণির্বান ভারোত্তোলন ক্লাবের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান। এবং ৭ নভেম্বর পদত্যাগ করেন দেশের ভারোত্তোলনে বিশেষ অবদান রাখা ক্রীড়াবিদ, সংগঠক ও খেলোয়াড় তৈরীর কারিগর মোয়াজ্জেম জিমন্যাস্টিক্স ক্লাব, মেহেরপুর এর প্রতিষ্ঠাতা মো. মোয়াজ্জেম হোসেন।