স্পোর্টস লাইফ, প্রতিবেদক : আবদুস সালাম মুর্শেদী বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের একজন বড় তারকা। তবে এর চেয়েও বড় তারকা তিনি বাংলাদেশের ফুটবল জগতের। ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের স্ট্রাইকার ছিলেন মি. মুর্শেদী। সেই ১৯৬৩ সালে খুলনায় জন্ম, সেখানেই ফুটবলে হাতেখড়ি।
স্থানীয় ইয়ং মুসলিম ক্লাবের মাধ্যমে প্রথম বিভাগে খেলার শুরু। এরপর ১৯৭৭ সালে আজাদ স্পোর্টিং-এ যোগ দিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। আজাদে দুই বছর আর বিজেএমসি ক্লাবে এক বছর খেলে সুযোগ পান স্বপ্নের ক্লাব মোহামেডানে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের বর্তমান সভাপতি কিংবদন্তি কাজী সালাউদ্দিনের রেকর্ড ভেঙ্গে ১৯৮২ সালে লীগে করেন ২৭ গোল। যে রেকর্ড এখনও কেউ ভাঙ্গতে পারেনি।
খেলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলেও। টিনের একটি সুটকেস হাতে খুলনা থেকে একদিন ঢাকায় এসেছিলেন মি. মুর্শেদী। আজ তিনি এনভয় গ্রুপ নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাঁর প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করেন প্রায় ২০,০০০ কর্মী।
সফল একজন মানুষ। যিনি খেলোয়াড় হিসেবে সফল, ব্যবসায়ী হিসেবেও, এমনকি পারিবারিক জীবনেও সফল। আবদুস সালাম মুর্শেদী। সত্তর থেকে আশির দশকের অন্যতম সেরা ফুটবলার। সেই সময়ে তিনি মাঠে নামলে দর্শক হৃদয় উদ্বেলিত হতো। ১৯৮২ সালে ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিনের রেকর্ড ভাঙার ওই বছরই সালাম মুর্শেদী ভারতে আশিস জব্বার টুর্নামেন্টে হ্যাটট্রিকসহ সর্বোচ্চ ১০ গোল করে ঢাকা মোহামেডানকে চ্যাম্পিয়ন করেন।
দেশের ও বিদেশের মাটিতে ওই দুটোই সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড, যা এখনো অক্ষুণ্ন আছে। এ জন্য ফুটবলে জাতীয় পুরস্কার এবং পোশাকশিল্পে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি পেয়েছেন বহুবার। তাঁর গুলশানের বাড়িতে নিজের স্মারক ও সেই গোলগুলোর ছবি দেখিয়ে বললেন ফেলে আসা জীবনের গল্পগুলো। ‘আমার জীবনে একদিনে সব আসেনি।
একটু একটু করে সব বদলেছে। বাবা শিক্ষক ছিলেন। সংসারে তেমন সচ্ছলতা ছিল না। ছোটবেলায় তিন বেলা ভাত খেতে ইচ্ছা করত। তখন দুই বেলা রুটি খেতাম। এখনো দুই বেলা রুটি খাই। তবে চিকিৎসকের পরামর্শে।’ বলেই হাসেন। এমনিতে গরুর মাংস ভালো লাগে। তবে মাছের প্রতি আছে বিশেষ আগ্রহ। ছোট মাছ খুবই প্রিয় সালাম মুর্শেদীর।
নিজেকে ফিট রাখতে প্রতিদিন সকালে হাঁটেন। সময় পেলেখালি হাতে ব্যায়াম করেন। ‘স্পোর্টস ম্যান’ যেহেতু, তাই খেলার প্রতি টান এখনো আছে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। সালাম মুর্শেদীর প্রিয় ফুটবলার মেসি ও ম্যারাডোনা। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ থাকলে রাত জেগে খেলা দেখেন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড দলের খেলা তাঁর ভালো লাগে। সকাল সাতটা থেকে শুরু হয় তাঁর দিন। হালকা নাশতা সেরে অফিসের জন্য বের হন। গাড়িতে শোনেন পুরোনো দিনের বাংলা-হিন্দি গান। জরুরি ফোনগুলোও তখন সেরে ফেলেন।
সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘অবসর খুব একটা মেলে না। শুধু কাজ, কাজ আর কাজ। এর ফাঁকে যতটুকু সময় পাই, সবটাই পরিবারের জন্য। পারিবারিক মানুষ আমি। প্রতি শুক্রবার রাতে দুই ছেলে ইশমাম, আইয়ান, মেয়ে শেহরীন, জামাই ও স্ত্রী শারমিনকে নিয়ে খেতে বের হই।’ চেষ্টা করেন ছুটির দিনে কোনো কাজ না রাখতে। পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে ভালোবাসেন।
আজ এ পর্যন্ত আসার পেছনে স্ত্রী শারমিন সালামের অবদান অনেক। যখন ব্যবসা নিয়ে দিন-রাত ব্যস্ত ছিলেন, সেই সময়টুকু পরিবারের সব কাজ সামলেছেন শারমিন। সালাম মুর্শেদীর পোশাক স্ত্রীই পছন্দ করে কিনে দেন। টি-শার্ট, প্যান্ট প্রিয় তাঁর। শারীরিক গঠনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মার্ক অ্যান্ড স্পেনসার ব্র্যান্ড পছন্দ করেন। এ ছাড়া হ্যাগার্ড, মার্কিন ব্র্যান্ড ইগল ভালো লাগে। ছেলে ও জামাইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে পাঞ্জাবিও পরেন।
আনুষ্ঠানিক সভাগুলোতে স্যুট, কোট, ব্লেজার পরা হয় সালাম মুর্শেদীর। আর নিজের যেহেতু তৈরি পোশাকশিল্প কারখানা আছে, সেখানকার ডেনিমও পরেন। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে জুতা পরেন। হাতে সব সময় ঘড়ি থাকে। সহধর্মিনীর দেওয়া হীরার আংটি আঙুলে পরছেন আজকাল সব সময়।
বিকেলে বাড়িতে ফিরে ছোট ছেলের সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করেন। রাতে খাবার খান ১০টার মধ্যে। এরপর টিভিতে খেলা, খবর দেখেন। ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টায় গেলে তাঁর কর্মব্যস্ত দিনটি শেষ হয়।