খেলোয়াড়দের টাকায় বডিবিল্ডিং কর্তাদের বিদেশ ভ্রমন! সেরা দুই প্লেয়ারকে রেখেই অংশ গ্রহন

হুমায়ুন সম্রাট : সম্প্রতি ২৫ থেকে ৩০ এপ্রিল মঙ্গোলিয়ার উলানবাটর- এ অনুষ্ঠিত হলো ৫২তম এশিয়ান বডিবিল্ডিং এন্ড ফিটনেস চ্যাম্পিয়নশিপ-২০১৮।

উক্ত চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বডিবিল্ডিং ফেডারেশনের কর্তৃক কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়, চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ দল থেকে মিস্টার বাংলাদেশ খ্যাত মোহাম্মদ নাজমুস সাকিব ভুঁইয়া, অপর মিস্টার বাংলাদেশ সুমন চন্দ্র দাস ও মিস্টার ঢাকা মো: আতিকুর রহমান শিমুল, দলনেতা হিসেবে বাংলাদেশ বডিবিল্ডিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো: নজরুল ইসলাম এবং অফিসিয়াল ডেলিগেট হিসেবে ফেডারেশনের কোষাধ্যক্ষ মো: জহির উদ্দিন চৌধুরী অংশ গ্রহন করবেন।

এ জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে ফেডারেশেনের পক্ষ্য থেকে উক্ত ৫জনের জিও (সরকারী অনুমোদন পত্র) এবং আর্থিক অনুদান চাওয়া হয়।

আবেদনের প্রেক্ষিতে উক্ত চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ গ্রহনের জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বাংলাদেশ দলকে জিও সহ ৪লক্ষ টাকা অনুদান দেন। ১৫এপ্রিল, ২০১৮ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব, মো: মাসুদ করিম- এর স্বাক্ষরিত অনুমোদন পত্র পায় ফেডারেশন।
সব কিছু ঠিকই ছিলো। এনএসসি চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ গ্রহনের জন্য ৩খেলোয়াড়কে আর্থিক সহায়তাও করেন।

কিন্তুু ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মঙ্গোলিয়াতে যান ১জন খেলোয়াড় মো: আতিকুর রহমান শিমুল, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম নিজে এবং কোষাধ্যক্ষ জহির চৌধুরীকে নিয়ে! কিন্তু কেন? দেশসেরা দুজন বডিবিল্ডার সাকিব ও সুমন কে রেখে, কেন নেওয়া হলো শিমুলকে? এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশের বডিবিল্ডিং এর সাথে জড়িতদের মধ্যে চলছে ফেডারেশন ও বিশেষ করে সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামকে নিয়ে নানা সমালোচনা।

এনএসসি থেকে আর্থিক সহযোগিতা এবং জিও তে নাম থাকা সত্বেও কেন মঙ্গোলিয়াতে খেলতে গেলেন না মিস্টার বাংলাদেশ খ্যাত সুমন চন্দ্র দাস? কথা বলে জানা গেল ভেতরের ঘটনা-

সমুন জানালেন, আন্তর্জাতিক কোন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন করার জন্য আমাদের বডিটা তৈরী করার জন্য কমপক্ষে ২মাস সময় প্রয়োজন। মঙ্গোলিয়াতে বাংলাদেশ দল যাবে সেটা আমি জানতে পারি শিমুল ভাইয়ের মাধ্যমে। ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আমাকে কোন কিছু জানানো হয়নি। পরে আমি ৮এপ্রিল নজরুল স্যারের সাথে কথা বলি। তিনি বলেন তুমি যাবে কি না। আমি বলি এত কম সময়ে ভাল প্রস্তুতি ছাড়া যাওয়া কি ঠিক হবে? ঠিক আছে যা ভাল হয় করেন। এই ঘটনার বেশ কয়েকদিন পর নজরুল স্যার ও জহির ভাই আমার জিমে দেখা করতে আসেন। তারা বলেন এনএসসি থেকে দুইজন কর্মকর্তা ও একজন খেলোয়াড় মোট ৩জনের টাকা দিয়েছে।

এখন তুমি বলো শিমুল আর তোমার মধ্যে কে যাবে? তখন আমি বললাম স্যার অল্প সময় আগে জানার ফলে আমার প্রস্তুতি তেমন ভাল না। আপনারা শিমুল ভাইকে নিয়ে যান। তখন তারা খুশি হয়ে আল হামদুলিল্লাহ বলে চলে যান। এরপর আমার সাথে আর কোন যোগাযোগ হয়নি। কিন্তু পরে আমিও জানতে পেরেছি এনএসসি থেকে ৫জনের জন্য আর্থিক অনুদান বাবদ ৪লক্ষ টাকা ও জিও প্রদান করেছে!

        মিস্টার বাংলাদেশ সুমন চন্দ্র দাস

অপর মিস্টার বাংলাদেশ সাকিবের সাথে কথা বলার জন্য ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার দুটি মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার সাথে মোবাইলে কথা বলা সম্ভব না হলেও তিনি আজ বুধবার (২মে) ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন।

সেখানে তিনি লেখেন- আন্তর্জাতিক বডিবিল্ডিং চ্যাম্পিয়নশিপ গুলোতে শুধু মাত্র অংশ গ্রহন করার মানুষিকতা হতে প্লেয়ার ও ফেডারেশনের সবার বের হয়ে আসা উচিত। কারণ আমাদের অনেক বডিবিল্ডার এখন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টপ প্লেস করার যোগ্যতা রাখে। আর যারা ইন্টারন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিবে তাদের উচিত পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়া। আর ফেডারেশনের উচিত যারা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় খেলতে যাবে তাদের আগে থেকেই বাছাই করে তত্বাবধানে রাখা।
সাকিবের এ বক্তব্য থেকে বুঝা যায় তিনিও সঠিক সময়ে চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ গ্রহনের বিষয়টি ফেডারেশন হতে জানতে পারেননি।

                                         মিস্টার বাংলাদেশ মোহাম্মদ নাজমুস সাকিব ভুঁইয়া

ফেডারেশন থেকে মঙ্গোলিয়াতে নিয়ে যাওয়া মো: আতিকুর রহমান শিমুল কখনও মিস্টার বাংলাদেশ হননি। দেশে তার সর্বোচ্চ ভাল ফলাফল মিস্টার ঢাকা খেতাব। শিমুলকে মঙ্গোলিয়াতে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ফেডারেশনের কোন কোন কর্তার বিরুদ্ধে উঠেছে স্বজন প্রীতিরও অভিযোগ।

ফেসবুকে অনেকেই লিখেছেন, এধরনের বিদেশ সফর বন্ধ করতে হবে। যারা ভাল তাদের নিয়ে যেতে হবে। আবার কেউ কেউ লিখেছেন খেলোয়াড়ের টাকায় কর্তাদের বিদেশ ভ্রমন!

এদিকে, ৩ খেলোয়াড়ের বদলে ১জনকে নিয়ে মঙ্গোলিয়াতে যাওয়া প্রসঙ্গে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব, মো: মাসুদ করিম বলেন- আমাদের কাছে ৩জন খেলোয়াড় সহ মোট ৫জনের জন্য ফেডারেশন থেকে অনুমতির জন্য আবেদন করা হয়। আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দি জিও- এর জন্য।

অনুমতি হলে আমরা ৫সদস্য বিশিষ্ট দলকে আর্থিক ভাবে ৪লক্ষ টাকা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করি। কিন্তু কেন ভাল দুজন খেলোয়াড়কে রেখে ১জন কে নিয়ে যাওয়া হলো সে বিষয়টি আমরা ফেডারেশনের কাছে জানতে চাইবো। যদি কোন খেলোয়াড় লিখিত অভিযোগ, সংবাদপত্র, অনলাইন বা টিভি খবরের মাধ্যমে আমরা বিষয়টি জানতে পারি তাহলে বিষয়টি নিয়ে ফেডারেশনের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।

আর এ প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য বাংলাদেশ বডিবিল্ডিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো: নজরুল ইসলামের সাথে মোবাইলে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তার দুটো নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে মঙ্গলবার (১মে) ২০১৮, দেশে ফিরে ঘটনা আচ করতে পেরে তিনি ফোন বন্ধ করে রেখেছেন।

Print Friendly, PDF & Email