নাসিরকে নিয়ে পাপনের পাল্টা প্রশ্ন

স্পোর্টস লাইফ, প্রতিবেদক : প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ৩১০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৪ উইকেট হারিয়ে ২৭০ রান সংগ্রহ করে। এরপর জয়ের জন্য বাকি ৩৯ রান করতে ১৭ রান তুলতেই হারায় সবক’টি উইকেট। ২১ রানের হারটা অবিশ্বাস্য হলেও শুক্রবার মিরপুরের ২২ গজে ঘটেছে এমনটাই।

মূলত মিডল অর্ডার ও লেট মিডল অর্ডারের ধসই হারের মূল কারণ। ইংলিশদের বিপক্ষে হারের পরই নাসির হোসেনকে নিয়ে আলোচনা সর্বত্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে সাবেক অনেক ক্রিকেটারও নাসিরের অন্তর্ভূক্তির দাবি জানিয়েছেন।

শুক্রবার সাংবাদিকরা বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কাছে যখন সাধারণ জনগণের এই প্রশ্নটি ছুড়ে দেন, বোর্ড সভাপতি সঙ্গে সঙ্গে উল্টো প্রশ্ন ছুড়লেন সাংবাদিকদের দিকে ‘কার জায়গায়?’

নাসিরের ব্যাপারে ব্যাখা দিলেন বোর্ড সভাপতি এভাবে, ‘নাসিরকে আনতে হলে সরাতে হবে মোশাররফ হোসেন রুবেলকে। একজন বাঁহাতি স্পিনার দিয়ে ইংল্যান্ড দলের সঙ্গে খেলা খুব কঠিন ব্যাপার। ওদের এই শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপে চারজন ডানহাতি হিটার ব্যাটসম্যান আছে। এখানে নাসিরকে খেলানোটা রিস্কি হয়ে যাচ্ছে। মোশাররফ রুবেল ‍এখানে শুধু বোলার হিসেবে আছেন। ওর কাছ থেকে আমরা অন্য কিছু আশা করিনি। গতকাল ও (মোশাররফ) ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে বোলিং করার সুযোগ পায়নি।’

নাজমুল হাসান পাপন সরাসরি নাসিরের বিপক্ষে কথা বললে দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ বিষয়টি অধিনায়ক ও কোচের কোর্টে পাঠিয়ে দিলেন, ‘এটা কোচ-অধিনায়কের ব্যাপার। এটা নিয়ে সেভাবে আলোচনা করা হয়নি। তবে অবশ্যই নাসির আমাদের পরিকল্পনায় আছে, এই কারণেই সে ১৪ জনের দলে আছে।’

মোশাররফকে সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীনের যুক্তি ছিল, তিনি ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে দারুণ একজন বোলার। সেই সঙ্গে শেষ দিকে ব্যাটিং করতেও পারদর্শী। ব্যাটিংটাই মোশাররফকে জাতীয় দলে সুযোগ পেতে বাড়তি সহযোগিতা করেছে। অথচ আফগানিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচ ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ব্যাট হাতে কিছুই করতে পারেননি তিনি। তাই তাকে নিয়ে সমালোচনাও কম হচ্ছে না এখন।

নাসির একাদশে ঢুকবেন কিনা, এমন প্রশ্নে খালেদ মাহমুদ বলেছেন, ‘অবশ্যই পরিবর্তন হতে পারে। আমার কথা হচ্ছে দল পরিবর্তন করলে আমরা জিতবো, না করলে জিতবো না এমনটা নয়। টেকনিক্যালি দিকগুলো আমাদের কোচ দেখবেন। কোথায় কি দরকার, তা অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবেন। আমার মনে হয় এমন বড় দলের বিপক্ষে জিততে হলে ব্যাটসম্যানদেরই জিতাতে হবে। আপনি টেল এন্ডারদের ওপর নির্ভর করে জিততে পারবেন না। ব্যাটিং লাইনে প্রথম সাতে যারা ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলে, এটা তাদেরই দায়িত্ব। যারাই খেলুক যে কম্বিনেশনেই খেলা হোক, আমরা আমাদের সেরাটা খেলতে পারলে ইংল্যান্ডকে হারাতে পারবো।’

বোর্ড সভাপতির কথাতে অবশ্য স্পট মোশাররফ রুবেল আরও কিছু ম্যাচে সুযোগ পাওয়ার যোগ্য। এত তাড়াতাড়ি তাকে বাদ দিতে রাজি নন নাজমুল হাসান, ‘বারবার দল পরিবর্তন করার বিপক্ষে আমি। তাতে করে যারা নতুন আসবে, সবাই চিন্তিত থাকবে। এদেরকে নিশ্চিন্তভাবে খেলতে দিতে হবে। ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো-ওরা নিশ্চিন্ত মনে খেলতে পারে। তিন উইকেট পড়ার পরও প্রথম বলে ওরা ছয় মারতে পারে। কারণ ওরা ভয় পায় না, নিশ্চিতভাবে খেলার সুযোগ পায়। আমরা চাই আমাদের দল নিশ্চিন্ত মনে খেলুক।’

গত কয়েক ম্যাচেই ব্যাটিংয়ে শেষ দিকে খারাপ করছে বাংলাদেশ। শেষ ১০ ওভারে যেভাবে ব্যাটিং হওয়ার কথা সেভাবে হচ্ছে না। শুক্রবার কঠিন ম্যাচ সহজ বানিয়ে ভালোভাবে শেষ করতে পারেনি টাইগাররা। কেউই হয়ে উঠতে পারেননি ফিনিশার। তাই তো ফিনিশার খ্যাত নাসিরকে নিয়ে চলছে আলোচনা। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সবকিছুতেই দুর্দান্ত তিনি। কিন্তু একাদশেই সুযোগ পাচ্ছেন না গত কয়েক ম্যাচ ধরে।

গত বছরের নভেম্বরে দেশের মাটিতে শেষবার জাতীয় দলের জার্সিতে খেলেছিলেন নাসির। কিন্তু এরপর থেকে অলরাউন্ডার নাসির হোসেন উপেক্ষিত। চলতি বছর এশিয়া কাপে স্কোয়াডে থাকলেও একটি মাত্র ম্যাচ খেলার সৌভাগ্য হয়েছিল নাসিরের। এরপর ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব টি-টোয়েন্টির মূল পর্বের আগে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে একটি ম্যাচ খেলেন নাসির। এরপর আফগানিস্তান সিরিজে দলে থাকলেও ২২ গজে নামা হয়নি নাসির হোসেনের। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি রবিবার। ওই ম্যাচেই বাংলাদেশি ভক্তরা নাসিরকে দেখলে চাইলেও নাজমুল হোসেন শোনালেন অন্য রকম কথা।

অথচ সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানও নাসিরকে একাদশে খেলার যোগ্য করে তুলেছে। অদৃশ্য কোনও কারণে নাসির নেই একাদশে। সেটা অবশ্য অফিসিয়াল ভাষায় ‘টিম কম্বিনেশন’!

আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচের মূল একাদশে নাসিরের জায়গায় খেলানো হয় মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে দারুণ করলেও পরের দুই ম্যাচে তিনি ছিলেন বিবর্ণ। শুক্রবার ৯ ওভার বল করে ৫০ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। ব্যাটে নেমে প্রথম বলেই হন বোল্ড তিনি।

এত কিছুর পরও এখন দেখার বিষয় ইংলিশদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে ফিনিশার নাসিরকে দেখা যায় কিনা। নাসির ভক্তরা কিন্তু অপেক্ষায় আছেন ফিনিশার নাসিরকে ফিনিশার রূপে দেখতে!

Print Friendly, PDF & Email