শামীম-আল্-মামুন : এই ইনজুরি খেলোয়াড়দের অকস্মাৎ ঘটে থাকে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে নারী খেলোয়াড়দের জন্য অকস্মাৎ ইনজুরির সম্ভাবনা বেশী থাকে। আমরা জানি যে, যেকোন খেলায় যেখানে পায়ের মুভমেন্ট বা নড়াচড়া করার বিষয়গুলি থাকে যা সরাসরি তলপেটের মাংসপেশীর সাথে সংযুক্ত, সেসব ক্ষেত্রে এই ইনজুরি হয়।
ভলিবলে স্পাইকিং জাম্প এ্যাপ্রোচ বেশ কয়েকটি স্টেজ বা ধাপে সংঘটিত হয়। তম্মধ্যে টেক-অফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। টেক-অফ পিরিয়ডটা থেকে আরম্ভ করে আর্চিং ইন দ্য এয়ার বা বায়ূতে শরীরকে বাঁকিয়ে রাখার কৌশলের সময় তলপেটের মাংসপেশীর সংযোগ তৈরী হয়, যা একজন ভলিবল স্পাইকারকে কিছুটা সময় বায়ূতে বা ইন দ্য এয়ার থাকতে সাহায্য করে।
যদি কোন কারণে তলপেটের মাংসপেশী গুলি ওয়েল ওয়ার্মড আপ না হয় তখন সেখানে টান অনুভূত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে। এর আর একটি কারণ হলো শরীরের যেসব স্থানে মেদ বা চর্বির ভাগ একটু বেশী মাত্রায় জমা হয়, তার মধ্যে তলপেট অন্যতম। সুতারাং লোয়ার বেলীতে টান লেগে ইনজুরি একটি আকস্মিক দুঘর্টনা বলা চলে। এছাড়াও ভলিবলের ফ্লোর ডাইভিং ও কুইক বেন্ডিং এর সময়ও এই ইনজুরি হয়ে থাকে।
প্রতিকার : একই কথা বার বার এসে যায়, তাহলো, ভালভাবে ওয়ার্ম আপ করা। নী প্রেস অন দ্য চেস্ট, চিন আপ, সিট আপ, পুশ আপ, জাম্প উইদ নীজ আপ, পপ আপ, লেগজ টুস্টিং জাম্প ইত্যাদি ব্যায়াম অত্যন্ত কার্যকরী এই ব্যথা বা ইনজুরি প্রতিরোধ করার জন্য। তবে এই ইনজুরি হওয়ার সাথে সাথে ঠান্ডা বা বরফ দিয়ে ব্যথা কমানোর ব্যবস্থা সবচেয়ে কার্যকর।
আবেদন : একটি বিষয় আমাদের খেলোয়াড়বৃন্দ, সম্মানিত পাঠক ও ক্রীড়ানুরাগীদের জন্য বলতে চাই, একজন প্রশিক্ষককে পেশাগত দক্ষতা ও যোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য যেকোন ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে (দেশে-বিদেশে) ক্রীড়া প্রশিক্ষণ বিষয়ক স্বল্প মেয়াদী বা দীর্ঘ মেয়াদী তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক জ্ঞান যেমন আহরণ করতে হয়, একইভাবে, তাঁকে স্পোর্টস সায়েন্সের গুরুত্বপূর্ণ কিছু পাঠ গ্রহন করে ক্রীড়া প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতার সময় আপতৎকলীন ফিজিও’র ভূমিকাটি কিছুটা হলেও পালন করতে হয়।
কারণ ক্রীড়া চর্চা বা অনুশীলন, ওয়েট ট্রেনিং, কন্ডিশনিং বা লোড প্রয়োগের ক্ষেত্রে একজন এ্যাথলিট বা খেলোয়াড়ের পালস্ রেট চেক থেকে আরম্ভ করে ওয়েট ট্রেনিং এর প্রাথমিক পর্যায়ে বডি ওয়েট নির্বিশেষে ওয়েট নির্বাচন কোচকেই করতে হয়। সুতারাং মাঠে সরাসরি কোচকেই ইনজুরি বা শারীরিক ব্যথা ও আঘাত প্রাপ্তির বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান শুধু নয় কোচকে তাৎক্ষনিক সুরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাক বাঞ্ছনীয়।
ইনজুরি প্রতিকার থিওরি :
এই প্রসঙ্গে যে বিষয়টি প্রশিক্ষকদের জানা উচিত তাহলো- P R I C E ইমপ্লিমেন্টেশন। আসুন প্রাইসকে বিশ্লেষনের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করি।
P (পি) – অর্থ PROTECTION (প্রোটেকশন বা সুরক্ষা)
R (আর) – অর্থ REST (রেস্ট বা বিশ্রাম)
I (আই) – অর্থ ICE (আইস বা বরফ)
C (সি) – অর্থ COMPRESSION (কমপ্রেশন বা চাপ বা বেঁধে দেওয়া)
E (ই) – অর্থ ELEVATION (ইলিভিশন বা উপরে ওঠানো)
প্রোটেকশন : ক্রীড়াবিদগণ যে মুহুর্তে কোন ব্যথা বা আঘাত জনিত সমস্যায় ভোগে, সাথে সাথে ব্যথা’র স্থানে যেন পুনরায় আর কোন রকম আঘাত না লাগে তার সুরক্ষার প্রতি নজর রাখা। যেমন ধরা যাক কোন খেলোয়াড়ের নী ইনজুরি হয়েছে। সেখানে অযথা না জেনে টানাটানি বা চাপা চাপি করে লীগামেন্টর আরো ক্ষতিকর পরিস্থিতির তৈরী করা। একইভাবে এ্যাংকল বা কোন ধরনের মাসল পুলের ক্ষেত্রেও রাব করা বা মালিশ করা বা টানা টানি না করা।
রেস্ট : আঘাত প্রাপ্ত খেলোয়াড়কে তাঁর আঘাতের মাত্রা অনুযায়ী কোচের দায়িত্ব হবে বিশ্রাম দেয়া এবং আঘাতের পরিচর্যা করা।
আইস বা বরফ : আঘাত পাওয়ার সাথে সাথে আঘাতের স্থানে যাতে রক্ত জমাট বাঁধতে না পারে এবং ফুলে যেতে না পারে সেজন্য খেলোয়াড়ের ব্যথা দ্রুত কমানোর ব্যবস্থা হিসবে বরফ ব্যবহার করা একটি গুরুত্বপূর্ণ তাৎক্ষনিক মেডিসিন।
কমপ্রেশন : যদি মনে হয় খেলোয়াড়ের জয়েন্ট বা মাসল এ ব্যান্ডেজ দ্বারা সুরক্ষা প্রয়োজন, তবে সাথে সাথে তার ব্যবস্থা নেয়া। ক্রেপ বা সাধারন ব্যান্ডেজের মাধ্যমে বিল্ডিং, ফ্রাকচার বা জয়েন্টকে সুরক্ষার ব্যবস্থা নেয়া।
ইলিভিশন বা উত্তোলন : আঘাতের স্থান সোজা এবং সঠিকভাবে রাখার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার জরুরী। হাঁটুতে বা পায়ের আঘাতে ইলিভিশন পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত তাতে করে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে এবং নিরাময়ও দ্রুত হয়। বালিশের উপর পা রাখা যায় কিংবা পাকে ঝুলিয়ে উপরে কোন কিছুর সাহায্যে উচুঁ করে রাখা যায়।
ইনজুরি সম্পর্কে একেবারে ন্যুনতম জ্ঞানে আলোচনা করার দুঃসাহস দেখিয়েছি। আমি মনে করি স্পোর্টস মেডিসিন বিশেষজ্ঞ যাঁরা আছেন, তাঁরা নিঃসন্দেহে ইনজুরি সম্পর্কে আরো গভীর ভাবে ব্যাখা, বিশ্লেষন, প্রতিরোধ, প্রতিকার এবং নিরাময় সম্পর্কে মেডিসিন ও অন্যান্য আধুনিক ও মানসম্মত ভূমিকা পালন করতে পারবেন।
ক্রীড়াঙ্গনে অনেকে রয়েছেন যাঁরা আমার লেখা পড়ে আরও আলোচনা ও পর্যালোচনা করার সুযোগ পাবেন। বিশেষ করে আমার লেখার ধরণ, পদ্ধতি, বাক্যচয়ন, কন্টেন্ট বা বিষয় সম্পর্কিত তাঁদের লদ্ধ জ্ঞানও এই সুযোগে আলোচনায় আনার সুযোগ পাবেন। আমার লেখনীতে ভূল-ত্রুটির জন্য সকলের নিকট ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। অবসরে থেকে কিছু করার উদ্যোগে sportslife.com.bd এর এডিটর হুমায়ুন সম্রাট আমাকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য তাঁকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। সকলে সুস্থ ও ইনজুরি মুক্ত থাকুন এই কামনা সর্বদা।