শামীম-আল্-মামুন : ভলিবল খেলায় খেলোয়াড়দের ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনের সময় বা খেলা চলাকালীন সময়ে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা মোটেও অনাকাঙ্খিত নয়। অন্যসব খেলার মত ভলিবল খেলার আঘাত জনিত সমস্যা যদি বিশ্লেষণ করা যায়, তবে সেক্ষেত্রে ৫টি কমন ইনজুরি বা সাধারণ আঘাত বিশেষ ভাবে লক্ষ্যনীয়।
১. এ্যাংকল বা পায়ের গোড়ালীর জোড়া’র আঘাত
২. নী ইনজুরি বা হাঁটুর আঘাত
৩. সোলডার ইনজুরি বা কাঁধের আঘাত
৪. ফিংগার ইনজুরি বা আঙ্গুলের আঘাত
৫. লোয়ার ব্যাক ইনজুরি বা কোমরের আঘাত
উপরিল্লিখিত আঘাতগুলি কখন কিভাবে হয়ে থাকতে পারে সে সম্পর্কে আলোকপাত প্রয়োজন। আসুন দেখা যাক ভলিবল খেলোয়াড়দের এই আঘাতগুলি কোন কোন বিশেষ কারণ বা সময়ে হয়ে থাকে।
এ্যাংকল বা পায়ের গোড়ালির জোড়া’র আঘাত :
সবচেয়ে সাধারণ এই আঘাতকে ইংরেজীতে এ্যাংকল স্প্রেইন বলা হয়ে থাকে। এই আঘাত অন্য সব খেলাধূলার ক্ষেত্রেও একটি সাধারণ বা কমন ইনজুরি। ভলিবল খেলোয়াড়দের জন্য স্পাইক ও ব্লকের সময় জাম্প বা লাফ দেয়া একটি টেকনিক এবং লাফ দেয়ার পর মাটিতে বা ফ্লোরে ল্যান্ড করার সময় এই আঘাত বা ইনজুরি হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে।
বিশেষ করে স্পাইকিং ও ব্লক করার ক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের খেলার মাঠের বা মেঝের সাহায্য নিয়ে লাফিয়ে উপরে উঠতে হয়। তখন মেঝের অমসৃণতা, পায়ের জুতার নীচের মসৃণতা এমনকি ভূল এ্যাপ্রোচ বা সামনে যাওয়ার গতি ও প্রক্রিয়া সঠিক না হওয়ার ফলে এবং অন্য সহযোগি খেলোয়াড়ের সাথে একই সমযে লাফানোর পর নীচে ফ্লোরে ল্যান্ডিং করার ক্ষেত্রে সঠিক প্রক্রিয়া অবলম্বন না করলে এই দূর্ঘটনা বা ব্যাথা পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হয়।
ব্লকিং করার ক্ষেত্রে যে সমস্যাটি সবচেয়ে বেশী হয়, তাহলো, সাইড মুভমেন্ট বা ডানে-বামে সাইড স্টেপ, রানিং স্টেপ এবং ক্রস স্টেপ নিয়ে ব্লকারকে স্পাইকারের সামনা-সামনি হয়ে বলকে ব্লক করতে হয়। তখন এগিয়ে যাওয়ার পায়ের টেকনিক্যাল এ্যাপ্রোচ যদি সঠিক না হয় এমনকি মুভমেন্ট চেক দেওয়ার পদ্ধতি যদি জানা না থাকে তবে এ্যাংকেল বা পায়ের গোড়ালির জয়েন্টে আঘাত পাওয়ার মত অবস্থা সৃষ্টি হয। এছাড়া বিপক্ষ দলের স্পাইকাররাও অনেক ক্ষেত্রে বডি/শারীরিক ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলে এবং ব্লকারদের পায়ের উপর পড়ে গিয়ে নিজেও আঘাত প্রাপ্ত হয় এবং ব্লকারকেও আঘাত পেতে সাহায্য করে।
এছাড়াও ডিফেন্স করার সময় কুইক মুভমেন্ট, জাম্প সার্ভিস করার সময়ও এই এ্যাংকল ইনজুরি হতে পারে।
প্রতিকার :
খেলোয়াড়দের ভালোভাবে প্রত্যেকটি জয়েন্ট ও মাসল্ ওয়ামির্ং আপ করতে হবে স্ট্রেটিং এর মাধ্যমে। প্রয়োজনমত কিছু কিছু ব্যায়াম দ্বারাও এই জয়েন্ট ও মাসলগুলোকে শক্তিশালী করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
উপযুক্ত প্লেয়িং সু বা জুতা ব্যবহার করা। একই সাথে খেলার মাঠ বা সারফেস দেখে ঠিক সেরকম ব্যবস্থা নিতে হবে। অযথা অধিক জাম্প এড়িয়ে যেতে হবে।
সর্বপরি, ব্যাথা পাওয়ার সাথে সাথে বরফ দিয়ে জায়গাটিকে বেঁধে দিতে হবে যাতে আঘাতের জায়গায় ফোলা দেখা না দিতে পারে। সাথে সাথে ক্রস ব্যান্ডেজ দিয়ে এ্যাংকল সুন্দরভাবে বেঁধে দিতে হবে। তবে দেখা প্রয়োজন, ইনজুরির ধরণ কি রকম। যদি হাড় ভেঙে যায় বা জয়েন্ট ডিসলোকেশন হয়, তবে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রতিযোগিতামূলক খেলায় যেখানে বডি মুভমেন্ট বা শারীরিক অঙ্গপ্রতঙ্গেও গতিশীল ব্যবহার রয়েছে, সেখানে কম-বেশী ইনজুরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে ভিগোরাস মুভমেন্ট বা কঠোর/দৃঢ়তর গতি সম্পন্ন খেলা সেখানে ইনজুরি বা আঘাত প্রাপ্তির সম্ভাবনা বেশী থাকে।
সাধারনত ভলিবল খেলাকে এক্সপ্লোসিভ পাওয়ার ওরিয়েন্টেড খেলা বলা হয়ে থাকে সংগত কারণে তাহলো, প্রতিযোগিতায় জয়লাবে প্রথম থেকে আধুনিক ভলিবলে এ্যাগ্রেসিভ বা আক্রমণাত্মক খেলা দিয়েই এ সূচনা হয়। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো জাম্প সার্ভিস। ভলিবলের খেলা শুরু প্রথম ও প্রধানতম টেকনিক বা কৌশল তা হলো সার্ভিস। আধুনিক ভলিবল খেলায় উন্নত বিশ্বেও দলগুলো শুধু নয় বরং উন্নয়নশীল ও উন্নয়নকামী দেশের খেলোয়াড়েরা তাদেও শারীরিক গড়ন, যাইই থাকুক না কেন আধুনিক ভলিবলে সর্বোত্তম কৌশল রপ্ত করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে, জাম্প সার্ভিস করার প্রবনতা এ সময়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক খেলায় পরিলক্ষিত হয়।
ভলিবল খেলায় এ শুরুতে জাম্প সার্ভ এখন ফার্স্ট এ্যাটাক নামে প্রচলিত ও সমাদৃত। সুতারাং বল কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণসহ শারীরিক দক্ষতা ও ফিটনেস সহ শুন্যে ভেসে থাকা বা ইন দ্য এয়ার সজোরে ও সূচারু রুপে বলকে কন্টাক্ট এর মাধ্যমে বিপক্ষ দলের কোর্টে পাঠানোর মাধ্যমে সরাসরি পয়েন্ট অর্জন করার প্রবণতাতেও ইনজুরি হওয়ায় সম্ভাবনা থাকে।
পরিশেষে : যে কোন ব্যথা বা আঘাত ক্রীড়া নৈপুন্য ব্যাহত করে। এজন্য প্রয়োজন সতর্কতা। যার মাধ্যমে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ক্রীড়া অনুশীলন বা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহনের পূর্বে পরিমিত ওয়ার্মিং আপ কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। কোন ক্রীড়াবিদকে এই বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া ঠিক নয়। বরং খেলায় অংশ নেয়া এবং ক্রীড়ানুশীলন করার পূর্ব প্রস্তুতি সঠিক থাকা প্রয়োজন । এতে করে ইনজুরি বা ব্যাথা পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। ( চলবে )